আজ ২২শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ছবি-সংগৃহীত

শান্তিচুক্তি মানে ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ নয় : ম্যাক্রো

ইউক্রেন নিয়ে যেকোনো শান্তি চুক্তিতে নিরাপত্তা গ্যারান্টি থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো। হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতের পর তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এই শান্তি অবশ্যই ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ হবে না। অবশ্যই গ্যারান্টি ছাড়া কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না।

ট্রাম্প নিজে অবশ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টি উল্লেখ করেননি। তিনি বলেছেন, শান্তি নিশ্চিত করার খরচ ও বোঝা শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং ইউরোপীয় দেশগুলোরও বহন করা উচিত।

ম্যাক্রো এতে সাড়া দিয়েছেন যে নিরাপত্তার খরচ বহনের ক্ষেত্রে আরও ন্যায্যতার বিষয়টি ইউরোপের অনুধাবন করা উচিত। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার আগ্রাসনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি আলোচনার একটি পথ দেখিয়েছে।

দুই নেতা তাদের বৈঠকের সময় উষ্ণ বার্তা বিনিময় করেছেন। তারপরও ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান নিয়ে তাদের মধ্যকার মতপার্থক্যও পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। তারা ওভাল অফিসে প্রায় ৪০ মিনিট সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন।

যেসব বিষয়ে মতপার্থক্য ছিল তার মধ্যে একটি হলো- যেকোনো ধরনের শান্তি চুক্তিতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি যত দ্রুত সম্ভব একটি যুদ্ধবিরতি চেয়েছেন। এতে একমত হলে তিনি রাশিয়া সফরে গিয়ে ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। ম্যাক্রো যদিও যুদ্ধবিরতির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে আরও কিছু বিবেচনার দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি একটি বিস্তৃত শান্তি চুক্তির কথা বলেছেন যেখানে ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকবে।

ম্যাক্রো বলেন, আমরা দ্রুত শান্তি চাই। কিন্তু আমরা কোনো দুর্বল চুক্তি চাই না।

তারা দুজনেই শান্তিচুক্তিতে ইউক্রেনে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি রাখা নিয়ে একমত হয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, পুতিন এটা গ্রহণ করবেন। আমি তাকে এই প্রশ্ন করেছি, তার এতে কোনো সমস্যা নেই।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, এটা করার পেছনে তার যৌক্তিক কারণ রয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, গত সপ্তাহে ফোনে কথা বলার পর তিনি রাশিয়ান নেতার সাথে সাক্ষাতের পরিকল্পনা করছেন। আমি জানি না আমরা কখন কথা বলব। এক পর্যায়ে আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে দেখা করব।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের তৃতীয় বার্ষিকীতে এ বৈঠক করলেন ম্যাক্রো ও ট্রাম্প।

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দিনটি শুরু করেছেন একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে। যেখানে ‘ইউক্রেনিয়ানদের বীরত্বের তিন বছর’ এর কথা বলা হয়েছে। পরে তিনি বৈশ্বিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কিয়েভে ওই অনুষ্ঠানে বিশ্ব নেতাদের অনেকে যোগ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা আশা করছি যে চলতি বছরেই আমরা যুদ্ধ শেষ করতে পারব।

অন্য নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও জাপানের নেতারা ভিডিও লিংকে কথা বলেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধি তাতে যোগ দেয়নি।

জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমেইয়ের মস্কো ও ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক উষ্ণ সম্পর্কের বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমাদের ইউক্রেনে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহে গতি বাড়াতে হবে। এই যুদ্ধ ইউরোপের ভবিষ্যৎ সংকটের কেন্দ্রেই থাকবে।

এই যুদ্ধের বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ একটি রেজুলেশন গ্রহণ করেছে। এতে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, ঐক্য ও ভূখণ্ডগত সংহতির প্রতি জাতিসংঘের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এই রেজুলেশনের বিরোধিতা করেছে। এর পরিবর্তে তারা নিজেরাই একটি প্রস্তাব এনেছে যেখানে রাশিয়ার আগ্রাসনকে একটি ‘সংঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, এতে রাশিয়ার কোনো সমালোচনা করা হয়নি।

ওদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য নতুন করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাখা হয়েছে রাশিয়ার অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানি ও এর কথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’কে। এ ধরনের নৌযানগুলো নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ব্যবহার করা হয়।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাখা হয়েছে এমন মেশিন টুলস ও ইলেকট্রনিকস, যা রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি। তার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে রাশিয়াকে সহায়তা করতে ১১ হাজার উত্তর কোরীয় সৈন্য মোতায়েনের অভিযোগ করা হয়েছে।

সংবাদ-সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category