আজ ২৩শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

খণ্ডকালীন যুদ্ধবিরতি ২ শহরে ঘোষণা রাশিয়ার

ইউক্রেনের সমুদ্রতীরবর্তী দুই শহর মারিউপুল ও ভোলনোভখা’র বেসামরিক লোকজনকে যুদ্ধস্থল থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে খণ্ডকালীন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে রাশিয়া। বেলারুশে রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র।

শুক্রবার মস্কোতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ, ৫ মার্চ মস্কোর স্থানীয় সময় বেলা ১০ টা থেকে খণ্ডকালীন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের মারিউপুল ও ভোলনোভখা’র বাসিন্দারা যেন নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারেন, সেজন্যেই এই যুদ্ধবিরতি দেওয়া হয়েছে।’

ওই মুখপাত্র আরও বলেন, বেসামরিক লোকজন শহরত্যাগের জন্য কোন কোন সড়ক ব্যবহার করবেন— সে সম্পর্কে মস্কোকে জানাতে সম্মত হয়েছে কিয়েভ।

কয়েক বছর আগে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে ইউক্রেন এবং তার পর থেকেই এই ব্যাপারটিকে ঘিরে দ্বন্দ্ব শুরু হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে।

এর মধ্যে ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় দ্বন্দ্বের তীব্রতা আরও বাড়ে। ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো।

কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে— যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।

অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া; এবং তার দু’দিন পর, ২৪ তারিখ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

গত ৯ দিনের রুশ অভিযানে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্শিতী রাষ্ট্র পোল্যান্ড ও রোমানিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ১০ লাখ ইউক্রেনীয়। এছাড়াও শতাধিক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে আছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশুও।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তারা অবশ্য সংলাপ শুরু করেছেন। সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্র বেলারুশের উদ্যোগে দেশটির ইউক্রেন সীমান্তবর্তী শহর গোমেলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফা বৈঠক হয় দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে।

তার পর দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় বৃহস্পতিবার। প্রথম বৈঠকে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল স্পষ্টভাবে জানা না গেলেও দ্বিতীয় দফার বৈঠকে তিনটি পয়েন্টের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এগুলো হলো—

১.অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি

২. অস্ত্রবিরতি

৩. অবিরাম গোলাবর্ষণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহর এবং গ্রাম থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য মানবিক করিডোর চালু।

এসবের মধ্যে তৃতীয় পয়েন্ট অর্থাৎ অবিরাম গোলাবর্ষণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহর এবং গ্রাম থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য মানবিক করিডোর চালুর ব্যাপারে রুশ ও ইউক্রেন প্রতিনিধিদল ঐকমত্যে পৌঁছেছেন বলে বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।

বর্তমানে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ, খারকিভ, শেরনিগভ, মারিউপোল ও ভোলনোভাখা শহরে ব্যাপক সংঘাত হচ্ছে রুশ ও ইউক্রেন বাহিনীর সেনা সদস্যদের মধ্যে। এসবের মধ্যে মারিউপোল ও ভোলনোভাখা শহরের অবস্থা সবচেয়ে সঙ্গীন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সহকারী মিখাইল পোদোলায়াক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category