দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে উঠেছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবী চিত্রা হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এই সুন্দরবন। তবে এর মধ্যে সৌন্দর্য আর শক্তিতে রাজার আসন দখল করে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। অবশ্য চাইলেই এই বাঘ দেখা যায় না সুন্দরবনে। ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য বনের মধ্যে যেখানে একটি বাঘের দেখা পাওয়াও পরম সৌভাগ্যের, সেখানে একই সঙ্গে চারটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে এক দল পর্যটকের।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ছিটা কটকা খালে গত শনিবার (১২ মার্চ) এক সঙ্গে ৪টি বাঘের দেখা পেয়েছেন ট্যুর অপারেটর সুন্দরবন হলিডেজের পর্যটকরা।ট্যুর অপারেটর সূত্রে জানা যায়, গত ১১ মার্চ এম ডি দ্য ওয়েভ লঞ্চে ৬৮ জন পর্যটক নিয়ে তারা সুন্দরবনে যাত্রা করেন। ১২ মার্চ তারা বনের কচিখালিতে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে বিকেল ৪টার দিকে করমজলের দিকে রওনা করেন তারা। কিছু দূর এগিয়ে ছিটা কটকা খালে বাঘের দেখা পান তারা। ১৩ মার্চ দুপুরে তারা সুন্দরবন থেকে ফিরে এসেছেন।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কটকা এলাকায় একসঙ্গে ৩টি বাঘের দেখা পেয়েছিলেন বন বিভাগের স্মার্ট পেট্রোল টিমের সদস্যরা। সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের অবাধ বিচরণ ও প্রতিনিয়ত বাঘের শাবকের দেখা মিলছে বলে জানান সুন্দরবনের জেলে-বাওয়ালিরা।
ট্যুর অপারেটর সুন্দরবন হলিডেজ ট্যুর গাইড শাহ ইলিয়াস বিন আজাদ তাপস বলেন, ১২ মার্চ বিকেলে ছিটা কটকা খাল দিয়ে ঘুরছিলাম। ৫টার পরে ছিটা কটকা খালের পাড়ে বনের পাশে গোলপাতা গাছের মধ্যে প্রথমে একটি বাঘ দেখতে পাই। লঞ্চ নিয়ে আরও একটু কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে সেখানে ৪টি বাঘ দেখতে পাই। সবগুলো বড় আকারের বাঘ। কিছুক্ষণ পরে তারা একে একে বনের ভেতরে চলে যায়। পরে আমরা ওই জায়গা থেকে চলে আসি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এক সঙ্গে তিন বাঘের দেখা পাওয়া বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা কার্যালয়ের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের কটকা অভয়ারণ্য এলাকায় স্মার্ট পেট্রোল টিমের টহলের সময় এক সঙ্গে ৩টি বাঘের দেখা পাই। এক সঙ্গে মা ও দুটি বাচ্চাসহ ছিল। দিনে দিনে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। ১৯৮২ সালের জরিপে দেখা যায় বাঘের সংখ্যা ৪২৫টি। ১৯৮৪ সালে সুন্দরবনের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়। ২০১৫ সালে ‘ক্যামেরা ট্র্যাকিং’ পদ্ধতিতে পরিচালিত জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয়েছে ১০৬টি। ২০১৮ সালে করা একটি জরিপের ফলাফলে জানা যায় সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, করোনাকালীন প্রায় দুই বছর সুন্দরবনে মানুষ-নৌযান প্রবেশ নিষেধ ছিল। ফলে এই সময়ে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের আনাগোনা দেখা গেছে। আমরা ধারণা করছি বনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে নতুন করে বাঘ শুমারি করে এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, বাঘের প্রজনন-বংশবৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া চোরাশিকারিদের তৎপরতা বন্ধে স্মার্ট পেট্রোলিং চালু রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
Leave a Reply