নবুয়ত লাভের পূর্বে আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) একজন অত্যন্ত সফল ও শ্রদ্ধেয় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পূর্বপুরুষদের পথ অনুসরণ করে তিনি ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন ও বাহরাইনসহ আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে সফর করেছেন। তার সততা, বিশ্বস্ততা ও অসাধারণ দক্ষতার কারণে অল্প সময়েই তিনি মক্কার একজন খ্যাতিমান ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। মক্কার প্রখ্যাত ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হজরত খাদিজা (রা.)-এর ব্যবসাও তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছিলেন, যা তার ব্যবসায়িক প্রজ্ঞার এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
নবুয়তের দায়িত্ব লাভের পর দাওয়াতের কাজে সম্পূর্ণরূপে নিবেদিত থাকলেও তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যকে উপেক্ষা করেননি। বরং তিনি সাহাবিদের সর্বদা সৎপথে ব্যবসা করতে উৎসাহিত করতেন।
তিনি বলতেন, ‘জীবিকার দশ ভাগের নয় ভাগই ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে নিহিত, আর বাকি এক ভাগ গবাদিপশুর কাজে।’ (আল-জামিউস সাগির)। এই হাদিসটি কেবল ব্যবসার গুরুত্বই নয়, বরং ইসলামে সৎভাবে উপার্জনের প্রতি গভীর দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিচয় বহন করে।
মহানবী (সা.) সব সময় ব্যবসার মূল ভিত্তি হিসেবে সততা ও নৈতিকতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সৎ ব্যবসায়ীরা সিদ্দিক (সত্যবাদী) ও শহীদদের সঙ্গে resurrect (উত্থিত) হবেন।’ (ইবনে মাজাহ)। এটি এক অনন্য সম্মান, যা আল্লাহ তাআলা একজন সৎ ব্যবসায়ীকে দান করবেন। হজরত রাফে ইবনে খাদিজা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে যখন সর্বোত্তম উপার্জন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘ব্যক্তির নিজের শ্রমে উপার্জিত আয় এবং সততার সঙ্গে পরিচালিত বেচাকেনা।’ (মুসনাদে আহমাদ)।
এই হাদিসগুলো স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যকে শুধু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখে না; বরং একে আল্লাহর ইবাদতের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে—যেখানে সততা ও নৈতিকতার মানদণ্ড বজায় রাখা আবশ্যক। মহানবী (সা.)-এর জীবন ও শিক্ষা আমাদের এই মৌলিক শিক্ষা দেয় যে, একজন সৎ ব্যবসায়ী হওয়াও ইবাদতের অংশ এবং এটি প্রতিটি ব্যবসায়ীর জন্য এক অনুসরণীয় আদর্শ।
সংগৃহীত সংবাদ
Leave a Reply